গত বছর একমি ল্যাবরেটরিজের ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের নির্দেশক মূল্য ৭১ টাকায় অনুমোদন দেয় শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিলাম শেষে এ কোম্পানির শেয়ারের কাটঅফ প্রাইস নির্ধারিত হবে, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য যা হবে ইস্যুমূল্য।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন ও একমি ল্যাবরেটরিজের খসড়া প্রসপেক্টাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৫ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে একমির টার্নওভার ছিল ১ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। এ সময়ে কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৯২ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
সে হিসাব বছরে কোম্পানির সম্পদের বিপরীতে মুনাফার (রিটার্ন অন অ্যাসেট) হার ছিল ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। একই সময়ে স্কয়ার ফার্মার সম্পদের বিপরীতে মুনাফা ১৭ শতাংশ ছিল। এছাড়া রেনাটা ১১ দশমিক ৮ শতাংশ, ইবনে সিনা ফার্মা ১০ দশমিক ৬, অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস ১১ দশমিক ৪ ও বেক্সিমকো ফার্মার সম্পদের বিপরীতে মুনাফা ছিল ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
জানা গেছে, একমি ল্যাবরেটরিজের ‘সলিড ডোজেস ইউনিট’ ৫০ শতাংশ কর অবকাশ সুবিধা পায়। কোম্পানির মোট মুনাফার প্রায় ২০ শতাংশ আসে এ ইউনিট থেকে। তবে ২০১৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরের পর কর অবকাশের এ সুবিধা থাকবে না, যা পরবর্তী সময়ে মুনাফা প্রবৃদ্ধিতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণেই সম্পদের বিপরীতে একমির মুনাফা তুলনামূলক কম।
দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে একমি ল্যাবরেটরিজের অবস্থান নয় নম্বরে। ওষুধ বাজারের মোট ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ কোম্পানিটির দখলে। দেশীয় ওষুধের বাজারে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। ২০১৪-১৫ হিসাব বছরে স্কয়ার ফার্মার বার্ষিক টার্নওভার ছিল ৩ হাজার ২৮ কোটি টাকা। একই সময়ে ইকুইটির বিপরীতে এর মুনাফা (রিটার্ন অন ইকুইটি) ছিল ১৯ দশমিক ২ শতাংশ।
তবে ইকুইটির বিপরীতে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করে রেনাটা। প্রতিষ্ঠানটি গত বছর ২২ শতাংশের বেশি মুনাফা করে। এছাড়া ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের রিটার্ন অন ইকুইটি ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। অথচ একই সময়ে একমির রিটার্ন অন ইকুইটি ছিল মাত্র ৮ দশমিক ১ শতাংশ। অবশ্য এ হিসাবে বেক্সিমকো ফার্মার চেয়ে একমি কিছুটা উপরে রয়েছে।
২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত একমির ইকুইটি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিশোধিত মূলধন ১৬১ কোটি ৬০ লাখ ১৭ হাজার, শেয়ার প্রিমিয়াম ১৬০ কোটি ৫০ লাখ, রিটেইন্ড আর্নিংস ২৬৮ কোটি ৯৭ লাখ, সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন বাবদ ৫৩২ কোটি ও অন্যান্য রিজার্ভ ১৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এর বিপরীতে কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি ঋণ রয়েছে ৪৯০ কোটি টাকা।
২০১৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের হিসাব অনুসারে, কোম্পানির ১ হাজার ৫৫১ কোটি টাকার স্থায়ী সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে জমি ও জমি উন্নয়ন বাবদ সম্পদের পরিমাণ ৪০২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এছাড়া ভবন ৩৯২ কোটি ও মেশিনারিজের মূল্য হচ্ছে ১৯৭ কোটি টাকা। এর বাইরে ২৭১ কোটি টাকার নির্মাণকাজ চলছে এবং ১৪৪ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি আসার পথে রয়েছে।
এ সময় সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন বাবদ ৫৪২ কোটি ৯৮ লাখ টাকার অর্থ রিজার্ভে যোগ হয়েছে। এছাড়া রিটেইন্ড আর্নিংস রয়েছে ১৯৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। একমির পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ১৬১ কোটি ৬০ লাখ ১৭ হাজার টাকা।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের নিট মুনাফা পাঁচ বছরে প্রায় চার গুণ বেড়েছে। যদিও এ সময়ে কোম্পানির টার্নওভার প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৯-১০ সালে টার্নওভার ছিল ৫৫৫ কোটি টাকা, যা ২০১৪-১৫ সালে এসে দাঁড়ায় ১ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা।
উল্লিখিত সময়ে কোম্পানির কর-পরবর্তী মুনাফা ২২ কোটি ৭৮ লাখ থেকে বেড়ে ৯২ কোটি ১৯ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। যদিও ২০১০ সালে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ছিল ১০ কোটি টাকা। পরবর্তী পাঁচ বছরে তা ১৬১ কোটি ৬০ লাখ ১৭ হাজার টাকায় উন্নীত হয়। শেয়ারপ্রতি আয় ১ টাকা ৯৬ পয়সা থেকে বেড়ে ২০১৪ সালে ৫ টাকা ৬৫ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।
এদিকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের শেয়ার পেতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিডিং (নিলাম) শুরু হচ্ছে আজ। বুক বিল্ডিং পদ্ধতির নিয়মানুযায়ী, বিডিংয়ে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্দেশক মূল্যের ২০ শতাংশ উপরে বা নিচে শেয়ারদর প্রস্তাব করতে পারে।
এক্ষেত্রে বিডিং প্রক্রিয়ায় এ শেয়ারের সর্বনিম্ন দর ৫৬ টাকা ৮০ ও সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা ১০ পয়সায় মধ্যে যেকোনো প্রস্তাব দিতে পারবেন বিনিয়োগকারীরা। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৪০ শতাংশ বা দুই কোটি শেয়ার সংরক্ষিত রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য।
গত ৭ ডিসেম্বর বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বিডিংয়ের অনুমোদন পায় একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড। ২০১৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, একমি ল্যাবরেটরিজের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ৫ টাকা ৬৫ পয়সা ও শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ৬৬ টাকা ১৬ পয়সা।